SSC Chemistry || গ্রাফাইট এবং হীরা, একই কার্বনের ভিন্ন রুপ

SSC Chemistry || গ্রাফাইট এবং হীরা, একই কার্বনের ভিন্ন রুপ

আমরা এখানে আজকে এস. এস. সি. এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ১১তম অধ্যায় এবং ১২তম অধ্যায় থেকে গ্রাফাইট ও হীরা এবং কার্বন এর রূপভেদ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। 

SSC Chemistry


গ্রাফাইট এবং হীরা, একই কার্বনের ভিন্ন রুপ।

গ্রাফাইটের গঠনে প্র্যতেকটি কার্বন পরমানু তার পার্শ্ববর্তী তিনটি কার্বন পরমানুর সাথে সমযোজী বন্ধনে যুক্ত হয়। অর্থাৎ এখানে একটি ষড়ভুজের সৃষ্টি হয় যার ছয়টি বাহুর ছয়টি প্রান্তে ছয়টি কার্বন পরমানু অবস্থান করে

Photo of Mehedi Hasan Mehedi HasanSeptember 17, 2018 7,736 3 মিনিট লাগবে পড়তে কার্বনের নাম শুনি নাই এমন মানুষ আমাদের ভিতর খুব কমই আছে৷ 

কার্বন কলো বর্ণের অধাতু যা কয়লা এবং গ্রাফাইটের ( পেন্সিলের নিব এবং ব্যাটারির ভিতর যে কালো দণ্ডটি থাকে) প্রধান উপাদান।  

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না,যদিও এটার ভিন্ন  অর্থ আছে  কিন্তু আসলেই কয়লা বা কার্বনকে ধুয়ে ময়লা পরিষ্কার করা না গেলেও এই কার্বন প্রাকৃতিক ভাবেই নিজের এই কালো বর্ণ দূর করে নিজেকে অন্যতম দামি এবং উজ্জ্বলতম পদার্থ হীরায় রূপান্তরিত করতে পারে। 

একথা আমরা ছোটবেলা থেকে বইয়ে পড়ে আসছি যে হীরা এবং পেন্সিলে ব্যবহৃত গ্রাফাইট আসলে একই কার্বনের ভিন্ন রূপ মাত্র। কিন্তু আমাদের অনেকেই হয়ত জানি না কেন এবং কিভাবে হীরা আর গ্রাফাইট একই কার্বন থেকে সৃষ্টি হয়। 

এই আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
হীরা এবং গ্রাফাইট দুটিই কার্বনের ক্রিস্টাল গঠন। হীরা এবং কার্বনের দুটিরই গঠন খুবই সাধারণ,বিশুদ্ধ কার্বন। কিন্তু হীরা হলো এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত  পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন অর্থাৎ শক্ত পদার্থ ( মোহ স্কেলে ১০)  এবং গ্রাফাইট হলো একটি নরম পদার্থ ( মোহ স্কেলে ১এর চেয়েও কম)।  

হীরা ও গ্রাফাইটের রাসায়নিক ধর্মেও বেশ পার্থক্য আছে, যাই হোক আমার এদের সেসব ধর্মে যাওয়ার আগে এদের গঠন টা জেনে আসি, যে কারণেই একই পদার্থের সৃষ্টি হয়েও এদের বৈশিষ্ট্যে এতো পার্থক্য।


গ্রাফাইটঃ

গ্রাফাইটের গঠনে প্রত্যেকটি কার্বন পরমাণু তার পার্শ্ববর্তী তিনটি কার্বন পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে যুক্ত হয়।  অর্থাৎ এখানে একটি ষড়ভুজের সৃষ্টি হয় যার ছয়টি বাহুর ছয়টি প্রান্তে ছয়টি কার্বন পরমাণু অবস্থান করে।  

এই প্রত্যেকটি পরমাণু ওই ষড়ভুজের দুইটি পরমাণুর সাথে এবং পার্শ্ববর্তী ষড়ভুজের ওপর একটি কার্বন পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধন গঠন করে। এভাবে অসংখ্য ষড়ভুজ পাশাপাশি যুক্ত হয়ে একটি বিস্তৃত লেয়ার বা পর্দার মত সৃষ্টি করে। 

এবং এরকম অসংখ্য লেয়ার উপরে নিচে সজ্জিত হয়ে গঠন করে গ্রাফাইট এর ক্রিস্টাল স্ট্রাকচার। এখানে উপরে নিচের প্রত্যেকটি কার্বন পরমাণু একে অপরের সাথে দুর্বল ভ্যানডার ওয়াল বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। 

এই দুর্বল ভ্যানডারওয়াল বন্ধনের কারণেই গ্রাফাইটের একটি লেয়ার অন্যটি থেকে সহজে দুরে যেতে পারে এবং গ্রাফাইটের প্রকৃতি নরম হয়। একই করনেই গ্রাফাইটে মুক্ত ইলেকট্রন তৈরি হয় এবং গ্রাফাইট একটি অধাতু হয়েও বিদ্যুতের সুপরিবাহী হিসেবে কাজ করতে পারে। চিত্র থেকে গ্রাফাইটের গঠন ভালোভাবে  বুঝা যায়।


হীরাঃ

গ্রাফাইটের মত হীরাও কার্বনের তৈরি। কিন্তু এদের মধ্যে পার্থক্য হলো গঠনে। হীরাতে প্রত্যেকটি কার্বন পরমাণু পার্শ্ববর্তী চারটি কার্বন পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। 

এভাবে কার্বন পরমাণু গুলো আবদ্ধ হয়ে অনেক বড় এবং জটিল প্রকৃতির ক্রিস্টাল গঠন তৈরি করে।  এখানে গ্রাফাইটের মতো কোন আলাদা লেয়ার তৈরি হয় না এবং পার্শ্ববর্তী লেয়ারের সাথে কোন দুর্বল বন্ধনও তৈরি হয় না। 

যা হয় তা হলো প্রত্যেক কার্বন পরমাণু প্রত্যেকের সাথে সমযোজী বন্ধনে যুক্ত হয়।তাই এখানে একটা পরমাণু অন্যটি থেকে দুরেও যেতে পারে না অর্থাৎ তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয় না। 

তাই এখানে কোন মুক্ত ইলেকট্রন ও সৃষ্টি হয় না,তাই গ্রাফাইট বিদ্যুৎ পরিবাহী হলেও হীরা বিদ্যুৎ পরিবাহী না। এবং একই কারণে হীরার ক্রিস্টাল এতো বেশি শক্ত হয়।

এখন আমরা আলাদাভাবে এই দুইটি পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

গ্রাফাইটঃ

গ্রাফাইট দুই প্রকারের হয় প্রাকৃতিক এবং সিনথেটিক।
প্রাকৃতিক গ্রাফাইটঃ প্রাকৃতিক গ্রাফাইট হলো একপ্রকার খনিজ কার্বন।  এদের ক্রিস্টালাইন গঠনের যথেষ্ঠ পার্থক্য দেখা যায়। 

বেশিরভাগ প্রাকৃতিক গ্রাফাইট খনিতে অন্য খনিজের সাথে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক গ্রাফাইট তাপ ও বিদ্যুতের খুব ভালো পরিবাহি। একটি নির্দিষ্ট তাপীয় সীমার ভিতর এটি অপরিবর্তনীয় থাকে।  প্রাকৃতিক গ্রাফাইট আবার কয়েকটি ভাগে সাবডিভাইড করা যায়।যেমনঃ
(i) অ্যামরফাস
(ii)ফ্ল্যাক
(iii) হাই ক্রিস্টালাইন

অ্যামরফাস গ্রাফাইট

অ্যামরফাস গ্রাফাইট মেসোমরফিক রক যেমন  কয়লা,স্লেট ও শেলের সাথে অল্প পরিমানে পাওয়া যায়। এসব পদার্থের সাথে জিওগ্রাফিকাল এলাকা ভেদে ২৫% থেকে ৮৫% অ্যামরফাস গ্রাফাইট পাওয়া যায়।
অ্যামরফাস গ্রাফাইট ট্রেডিশনাল মাইনিং পদ্ধতিতে আহরণ করা হয়।  মেক্সিকো, উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া এ গ্রাফাইট পাওয়া যায়।

ফ্ল্যাক গ্রাফাইট

এ প্রকার গ্রাফাইট মেটামরফিক রকের আকরিকের সাথে সুসম ভাবে থাকে। এগুলোতে কার্বনের পরিমান ৫% থেকে ৫০% এর ভিতর পরিবর্তিত হয়। ফ্ল্যাক গ্রাফাইট লাইমস্টোন,জেনেসিস এবং সিস্ট এর মতো মেটামরফিক রকে স্কেলি অথবা ল্যামেলা হিসেবে থাকে।পৃথিবীর সব জায়গায় এ গ্রাফাইট পাওয়া যায়।

ক্রিস্টালাইন গ্রাফাইট

এটা মনে করা হয় যে এগুলো ক্রাড ওয়েল ( Crude oil)   থেকে সময়ের সাথে সাথে তাপমাত্রা ও চাপের কারনে গ্রাফাইটে পরিবর্তিত হয়। এগুলো ১সেন্টিমিটার থেকে ১মিটার পুরুত্বের এবং ৯০% এর বেশি বিশুদ্ধ হয়ে থাকে।

সিনথেটিক গ্রাফাইট

সিনথেটিক  গ্রাফাইট কোক(কয়লা) এবং পিচ থেকে তৈরি করা হয়।এগুলোর বিশুদ্ধতাও অনেক বেশি। দুই প্রকার সিনথেটিক গ্রাফাইট পাওয়া যায় প্রথমত ইলেক্ট্রোগ্রাফাইট যা বিশুদ্ধ কার্বন এবং এটা ক্যালসাইন্ড পেট্রোলিয়াম কোক এবং কোলটার পিচ থেকে ইলেকট্রিক ফারনেসের মাধ্যমে তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত ক্যালসাইন্ড পেট্রোলিয়াম পিচকে ২৮০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রেখে তৈরি করা হয়।
গ্রাফাইটের ব্যবহার

ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি

ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে গ্রাফাইটের প্রচুর ব্যবহার আছে যেমন ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড তৈরিতে আর্ক ফার্নেসে ব্যবহৃহ হয়।এছাড়া হ্যালোজেন প্রস্তুতিতে ইলেকট্রোলাইটিক পদ্ধতিতে গ্রাফাইট অ্যানোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রি

নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে বিশুদ্ধ ইলেকট্রোগ্রাফাইট  মডারেটর হিসেবে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এদের নিউট্রন শোষণ ক্ষমতা, তাপসহন ক্ষমতার জন্য নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকক্টরে গ্রাফাইট ব্যবহৃত হয়।

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন

ইলেক্ট্রিক্যাল ক্ষেত্রে গ্রাফাইটের ব্যবহার হয় মটোরের ব্রাস হিসেবে, এছাড়া ব্যাটারি এবং আরো অনেক ক্ষেত্রে গ্রাফাইট ব্যবহৃত হয়।

মেকানিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন

মেকানিক্যাল ক্ষেত্রে গ্রাফাইট ব্যাপক ব্যবহৃত হয় যেমন পিস্টন রিং, থ্রাস্ট বেয়ারিং,জার্নাল বেয়ারিং ইত্যাদি। বিভিন্ন এয়ারক্র্যাফট ইঞ্জিনের শ্যাফট এবং ফুয়েল পাম্পে সিল হিসেবে গ্রাফাইট ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গ্রাফাইটের আরো অনেক ব্যবহার আপনার দেখতে পাবেন। এখানে সামান্য কিছু তুলে ধরা হলো মাত্র।

হীরার প্রকারভেদ

প্রাকৃতিক হীরা
প্রাকৃতিক হীরা সাধারণত বিশুদ্ধতার উপর ভিত্তিতে  আলাদা করা হয়।যেমন
টাইপ  Ia

এটা সবচেয়ে প্রচলিত প্রাকৃতিক হীরা। এটাতে ০. ৩% পর্যন্ত নাইট্রোজেন মিস্রিত থাকতে পারে।
টাইপ  Ib

খুবই কম পরিমান প্রাকৃতিক হীরা এই প্রকার হয়ে থাকে।এই হীরায় ৫০০ পিপিএম পর্যন্ত নাইট্রোজেন থাকতে পারে।
টাইপ  IIa

এই প্রকারের হীরা প্রকৃতিতে খুবই বিরল।এটাতে নাইট্রোজেনের পরিমান খুবই কম এমনকি ইনফ্রারেড এবং আল্ট্রাভায়োলেট শোষন পদ্ধতিতেও শনাক্ত করা মুশকিল।
টাইপ  IIb

এই প্রকারের হীরা প্রকৃতিতে আরো বেশি বিরল।এতে নাইট্রোজেনের পরিমান টাইপ  IIa এর থেকে আরো কম।


সিনথেটিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল হীরা

উচ্চতাপমাত্রা এবং উচ্চচাপে সিনথেসিস( HPHT) প্রকৃয়ায় এ হীরা পাওয়া যায়। এ প্রকৃয়ায় গ্রাফাইট এবং ধাতব প্রভাবক উচ্চতাপ ও চাপে হাইড্রোলিক প্রেসে রাখা হয়।  কয়েক ঘন্টায় গ্রাফাইট হীরায় পরিনত হয়।

থিন ফিল্ম হীরা

ক্যামিক্যাল ভেপর ডিপজিশন ( CVD) পদ্ধতিতে পলিক্রিস্টালাইন হীরা তৈরি হয়।  CVD  পদ্ধতিতে যন্ত্রাংশে জিরো- ওয়ার (zero- wear) কোটিং করা সম্ভব হয়। ফলে ইলেকট্রনিক যন্ত্র পাতিতে তাপরোধী প্রলেপ দেওয়া সম্ভব হয়। এবং হীরার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ব্যবহার করা যায়।


উপসংহার 
এখানে আমি গ্রাফাইট এবং হীরা এর রূপভেদ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করবো সবাই বুঝতে পারবেন। কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। 

Previous Post Next Post